বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০৮:৪৯ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে আইন মন্ত্রী আনিসুল হক বে-সরকারি ভাবে নির্বাচিত কসবায় ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ আহত-৪ কসবায় এলজিইডি’র শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান আগরতলায় স্রোত আয়োজিত লোকসংস্কৃতি উৎসব কসবা প্রেসক্লাব সভাপতি’র উপর হামলার প্রতিবাদে মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সভা কসবায় চকচন্দ্রপুর হাফেজিয়া মাদ্রাসার বার্ষিক ফলাফল ঘোষণা, পুরস্কার বিতরণ ও ছবক প্রদান শ্রী অরবিন্দ কলেজের প্রথম নবীনবরণ অনুষ্ঠান আজ বছরের দীর্ঘতম রাত, আকাশে থাকবে চাঁদ বিএনপি-জামাত বিদেশীদের সাথে আঁতাত করেছে-কসবায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ১৩ দিনের জন্য ভোটের মাঠে নামছে সশস্ত্র বাহিনী
২৫ মার্চ, জাতীয় গণহত্যা দিবস

২৫ মার্চ, জাতীয় গণহত্যা দিবস

এস এম শাহনূর

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানী হানানদার বাহিনী তাদের পূর্ব পরিকল্পিত নীলনকশা অনুযায়ী অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নিরস্ত্র বাঙালির উপর ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরোচিত ও নিকৃষ্টতম গণহত্যা সূচনা করে। এর নাম অপারেশন সার্চ লাইট’। এটি ছিল বাঙালির একটি প্রজন্মকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার এক নারকীয় পরিকল্পনা।
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে জেনারেল টিক্কা খান বলেছিলেন, ‘আমি পূর্ব পাকিস্তানের মাটি চাই, মানুষ চাই না’। ফলে বাঙালি জাতির জীবনে নেমে আসে বিভীষিকাময় ভয়াল কালরাত।আজ বৃহস্পতিবার।কাকতালীয় হলেও সত্য আজ থেকে ৫০ বছর আগে ৭১ সালের ২৫ মার্চের দিনটিও ছিল বৃহস্পতিবার। আগামীকাল বাঙালি জাতি তার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে।জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী আর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ঠিক আগের দিন,১৯৭১সালের ২৫ মার্চ রাতে নিহত সকল বাঙালি শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

‘জাতিসংঘ ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর ‘জেনোসাইড কনভেনশন’ গ্রহণ করে। ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বরকে ‘জেনোসাইড ডে’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। সেই সূত্র ধরে ২০১৭সালের ১১ মার্চ তারিখে জাতীয় সংসদে
সংসদ কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ বিধিতে সাধারণ আলোচনা শেষে ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করা হয়। পরে ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত মন্ত্রীসভার বৈঠকে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা এবং জাতীয় ও আর্ন্তজাতিকভাবে দিবসটি পালনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয় ।
এ দিকে ৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২৫ মার্চ কালোরাতের তথ্য-উপাত্ত জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

অস্ট্রেলিয়ার “সিডনি মর্নিং হেরাল্ড” পত্রিকার ভাষ্যমতে শুধুমাত্র পঁচিশে মার্চ রাতেই বাংলাদেশে প্রায় এক লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, যা গণহত্যার ইতিহাসে এক জঘন্যতম ভয়াবহ ঘটনা। পরবর্তী নয় মাসে একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার লক্ষ্যে ৩০ লাখ নিরপরাধ নারী-পুরুষ-শিশুকে হত্যার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা পূর্ণতা দিয়েছিল সেই বর্বর ইতিহাসকে।
মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মাচর্ রাত সর্ম্পকে লিখেছেন, ‘সে রাতে ৭০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়, গ্রেফতার হলো আরো ৩০০০ লোক। ঢাকায় ঘটনার শুরু মাত্র হয়েছিল। সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চললো মৃতের সংখ্যা। জ্বালাতে শুরু করলো ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট লুট আর ধ্বংস তাদের নেশায় পরিণত হলো যেন। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক- শেয়ালের খাবারে পরিণত হলো। সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠলো শকুন তাড়িত শ্মশান ভূমি।’
পাইকারি এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তনের সঙ্কট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তানি সরকার মুক্তিযুদ্ব চলাকালে প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয়, “১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত এক লাখেরও বেশী মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।”

২৫ মার্চের এই হত্যাযজ্ঞের পূর্বাবাস অবাঙালীরা জানতো।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চ লাইট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সকল পদক্ষেপ চুড়ান্ত করে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে করাচি চলে যান।
সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং শেষ শত্রু বিদায় না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবার আহ্বান জানান।
বঙ্গবন্ধুর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালীরা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র লড়াই শেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ণ বিজয় অর্জন করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের।

লেখক: এস এম শাহনূর
কবি ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD